সুন্দর হতে কার না ভালো লাগে।আজকাল ছেলে মেয়ে উভয় সৌন্দর্য সচেতন হয়েছে।নিয়মিত ফেসিয়াল (facial) আপনার সৌন্দর্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধন করে।
ধুলোবালি ও রোদে পুড়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়।ব্রণ হয় ও ত্বকে দাগ দেখা যায়।একটি ভালোমানের ফেসিয়াল (facial) আপনার ত্বককে করে দাগহীন,উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়ী।বেশিরভাগ মেয়েরা পার্লারে ফেসিয়াল করে থাকে।সবার ত্বকের জন্য পার্লারে ফেসিয়াল (facial) নিরাপদ নয়।কারণ অনেকসময় পার্লারে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ক্যামিক্যালযুক্ত ফেসিয়াল ক্রিম ব্যবহার করে যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক ।খরচ ও বেশি হয়।তাই পার্লারে না গিয়ে ঘরে বসেই নিজে করে নিতে পারেন পার্লারের মতো ফেসিয়াল (facial) ।
ঘরে বসে ফেসিয়াল (facial) করার জন্য কিনজিং ও এক্সফোলিয়েটিং এর পর গরম পানির ভাপ নিতে হয় এবং মুখে যেকোন একটি মাস্ক লাগাতে হয় যাতে লোমকূপ নরম হয়ে খোলে যায়।পরিশেষে ত্বকে টোনার ও ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করতে এতে করে ত্বক আরোও সুন্দর,মসৃণ ও প্রাণবন্ত দেখায়।
প্রথম ধাপ: ক্লিনজিং ও এক্সফোলিয়েটিং
প্রথমে আপনি আপনার চুলগুলো শক্ত করে বেঁধে নিন।এতে মুখে ফেসিয়াল করায় সুবিধা হয়।
এবার একটি ভালো ক্লিনজার এর সাহায্যে আপনার মুখ ধুয়ে নিন।মুখে মেকাপ থাকলে তা ক্লিনজিং এর মাধ্যমে তুলে ফেলুন।ফেসিয়াল (facial) করলে মুখ অবশ্যই কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুবেন।এতে ত্কের লোমকূপ খুলে যায় ও মুখের মরা কোষ নরম হয়।
আপনি ক্লিনজিং এর ক্ষেত্রে যেকোন ধরনের তেল ব্যবহার করতে পারেন।এতে মুখে মেকাপ বা ময়লা থাকলে তা সহজে উঠে যায়।যেমনঃবাদাম তেল,জলপাই তেল বা নারিকেল তেল।
এবার আপনি যেকোন ধরনের ফেসিয়াল (facial) স্ক্রাব ব্যবহার করবেন।স্ক্রাব বা এক্সফোলিয়েটিং এর ফলে মুখের মরা চামড়া দূর হয়।ত্বকের কালচে ভাব দূর হয়।স্ক্রাবিং এর ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।এটি ফেসিয়ালের (facial) অন্যতম একটি ধাপ।আপনার পছন্দের যেকোন একটি স্ক্রাব নিয়ে মুখে আলতো করে ম্যাসাজ করুন।যদি আপনার বাসায় কেনা স্ক্রাব না থাকে তাহলে নিজেই তৈরী করে নিতে পারেন ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
১ চামচ চিনি ,১চামচ মধু ও ১চামচ কাঁচা দুধ
অথবা,১চামচ চালের গুড়া,১চামচ মধু ও ১ চামচ জলপাই তেল
অথবা, ১ চামচ বেসন,১ চামচ লেবু ও ১চামচ পানি।
এবার ১০-১৫ মিনিট পর মুখের স্ক্রাব আলতো করে ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন।মুখ ধোয়ার জন্য অবশ্যই কুসুম গরম পানিতে ছোট তোয়ালে ভিজিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।ধোয়া শেষে মুখ একটি শুকনা তোয়ালের সাহায্যে মুছে ফেলুন।
দ্বিতীয় ধাপ: ম্যাসাজিং
এবার পুরো মুখে আঙ্গুলের সাহায্যে ম্যাসাজ করুন।বৃত্তাকার গতিতে ম্যাসাজ করুন।ম্যাসাজের ফলে মুখের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ।ত্বকের উজ্জ্বলতা বেরে যায়।মুখের গাল,কপাল,ঠোঁটের চারপাশ,থুতনিতে মধ্য আঙ্গুলের সাহায্যে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন।ম্যাসাজের ক্ষেত্রে বাজার থেকে কেনা ম্যাসাজ ক্রিম (cream) ব্যবহার করতে পারেন।
তৃতীয় ধাপ: স্টিমিং
স্টিমিং এর জন্য প্রথমে একটি পাত্রে ফুটন্ত গরম পানি নিন।এবার মুখ পাত্রের উপর রেখে একটি তোয়ালে দিয়ে মাথা সহ পুরো মুখ ঢেকে নিন।স্টিমিং আপনার লোমকূপ এ জমে থাকা ময়লা নরম করে ও উপরে উঠে আসে।
আপনি চাইলে গরম পানিতে কোন এসেনশিয়াল অয়েল মিশাতে পারেন।এতে অ্যারোমা ট্রিটমেন্ট ও হয়ে যাবে। এসেনশিয়াল অয়েল হিসেবে লেমনগ্রাস,লেভেন্ডার বা গ্রেপ ফ্রুট এর তৈরী এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়াও এসেনশিয়াল অয়েল এর পরিবর্তে আপনি গরম পানিতে পুদিনাপাতা, গ্রীন টি ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন।
চতুর্থ ধাপ: ফেসিয়াল (facial) মাস্ক
স্টিমিং এর পরের ধাপ হলো ফেসিয়াল মাস্ক ।আপনি বাজার থেকে কেনা যেকোন ধরনের ফেসিয়াল (facial) মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন অথবা নিজেই বাড়িতে তৈরী করে নিতে পারেন।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
শুষ্ক ত্বকের জন্য ১চামচ কলা ও ১চামচ মধু
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ১চামচ ডিম এর সাদা অংশ,১চামচ মধু ও ১ চামচ লেবুর রস
মিশ্র ত্বকের জন্য ১ চামচ অ্যালোভার জেল ও ১ চামচ মধু
ফেসিয়াল (facial) মাস্কটি লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।চোখের কালোদাগ দূর করার জন্য আপনি চোখে শসা লাগাতে পারেন।অথবা দুই চোখে গ্রীন টি ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
পঞ্চম ধাপ: টোনিং
বাজার থেকে কেনা যেকোন ধরনের টোনার ব্যবহার করতে পারেন।এছাড়া নিজেই বাড়িতে তৈরী করে নিতে পারেন টোনার।টোনার ত্বক উজ্জ্বল করে ও ত্বকের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে।
টোনার তৈরীর নিয়ম:
১চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ও ১চামচ পানি
১ চামচ গোলাপজল ও ১ চামচ পানি
ষষ্ঠ ধাপ: ময়েশ্চরাইজিং
সর্বশেষ ধাপ হলো ময়েশ্চরাইজিং।এটি আপনার ত্বকে আদ্রতা রক্ষা করে ,ত্বকের কোমলতা রক্ষা করে।ফেসিয়াল (facial) শেষে অবশ্যই ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করতে হবে।কারণ ফেসিয়ালের (facial) পর ত্বক দ্রুত শুকিয়ে যায়।বাজার থেকে কেনা কোন ময়েশ্চরাইজার বা বাড়িতে তৈরী করে নিতে পারেন ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
আর্গন অয়েল বা নারিকেল তেল বা জোজোবা অয়েল
অ্যালোভেরা জেল একটি ভালো ময়েশ্চরাইজার।এটি রোদে পোড়া দাগ দূর করে।ত্বকে পুনরায় উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। ঘরে বসে ফেসিয়ালের (facial) পর অবশ্যই ১-২ঘণ্টা অ্যালকোহলযুক্ত বা ক্যামিক্যালযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা উচিত নয়।বিশেষ করে মেকাপ পণ্য নানারকম অ্যালকোহল দিয়ে তৈরী হয়।এতে ত্বকের আরো ক্ষতি হতে পারে। প্রতিমাসে অন্তত একবার হলেও ফেসিয়াল (facial) করা উচিত।