ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম কানুন জেনে নিই

আজকে আমাদের এই পোস্টটি ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কিত। ইসবগুল ‘গুল্ম’ জাতীয় গাছ। এর ফুল ছোট, পাপড়ি সূক্ষ হয়। বীজের খোসা আছে। ইসবগুল গাছের উচ্চতা দেড়-দুই ফুটের পর্যন্ত লম্বা হয়। ফল দুইকোষ বিশিষ্ট, ৭-৮ মিলিমিটার লম্বা হয় এবং ফলের ভিতরে ৩ মিলিমিটার লম্বা বীজ থাকে। বীজ দেখতে নৌকার মতো এবং এর খোসায় পিচ্ছিল হয়। এটা এক ধরনের রবিশস্য। হেমন্তকালে বীজ বপন করা হয়। চৈত্র মাসে ফসল তোলা হয়। ইসবগুল উপমহাদেশের সবাই চেনে। এর নানাবিধ উপকারিতা সম্পর্কেও আমরা ওয়াকিবহাল। নামের সাথে ‘গুল’ আছে বলে অনেকে ভাবি, হয়ত কোনো ক্ষুদ্র ফুলের সূক্ষ্ম পাপড়ি হবে, কিন্তু এর সম্পর্ক ফুলের সঙ্গে নয়, বীজের সঙ্গে। সঠিকভাবে বলতে গেলে বীজের খোসার সঙ্গে, যাকে আমরা ইসবগুলের ভুষি বলে জানি।। বিদেশি বাজারে এটা সিলিয়াম হাস্ক (Psyllium husk)। গ্রীক ‘সিলা’ (psylla) অর্থ এক ধরনের মাছি, ডানাহীন ফ্লি-মাছি। ইসবগুলের বীজ দেখতে আকারে অবয়বে অনেকটা ফ্লি-মাছির মতো বলে ইংরেজিতে এই নাম। ইসবগুল শব্দটা ফার্সি ‘ইসপা-গোল’ থেকে আগত যার অর্থ ‘ঘোড়ার কান’। খুব ছোট হলেও, খোসাগুলো শতশত গুণ বড় করে দেখলে ঘোড়ার কানের মতো মনে হতে পারে, তবে আমাদের খালবিলভরা জলজ উদ্ভিদ ‘ইঁদুরকানি’ পানায় ইঁদুর-কানের আকৃতির মতো তা সহজে অনুমেয় নয়। যাহোক, কল্পনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে, যোগবিয়োগ করে আমরা একে আত্তীকরণ করেছি বাংলায়, যা উচ্চারণগতভাবে ‘ইশবগুল’ এবং বানানে ‘ইসবগুল’।

ইসবগুলের ভুসি কি

ইসবগুলের ভুসি হল এক প্রকার দ্রবণীয় ফাইবার যা সাইলিয়াম (প্ল্যান্টাগো ওভাটা) বীজের খোসা থেকে পাওয়া যায়। রেচক বা ল্যাক্সেটিভ (laxative) হিসেবে পরিচিত ইসবগুলের ভুসি আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ, হার্ট বা হৃদপিন্ড এবং অগ্নাশয় (Pancreas) সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে বলে গবেষনায় প্রমাণিত হয়েছে।

উৎপত্তি ও পরিচিতি

এর আদি বাসভূমি ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে। তবে ক্রমে ক্রমে এটি দুনিয়ে জুড়ে এর বিস্তৃতি ঘটেছে। স্পেন, উত্তর আফ্রিকা, পাকিস্তানের সিন্ধু এলাকা, চীন, রাশিয়া ও ভারতে এর চাষ হতে দেখা যায়। ‘প্ল্যান্ট্যাগো’ জেনাসের প্রায় ২০০ প্রজাতির মধ্যে ১০ টি প্রজাতি ভারতে পাওয়া যায়। ভারতে ইসবগুল প্রবেশ করেছে ষোড়শ শতকে, মোগল শাষন আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসবগুলের ভুসির চাষ শুরু করা হয় বলে ধারণ করা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্যভাবে বেড়ে ওঠা সাইলিয়াম বিভিন্ন ধরণের নামে বিক্রি হয়। তবে সেখানে মেটামুসিল নামে পরিচিত।

আরো পড়ুন  ছেলেরা কেন খাবেন কিসমিস জেনে নিন উপকারীতা
ইসবগুলের ভুসি উৎপত্তি ও পরিচিতি
ইসবগুলের ভুসি উৎপত্তি ও পরিচিতি

বাণিজ্যিকভাবে যে কয়েকটি প্রজাতি চাষ করা হয় তার মধ্যে রয়েছে, ফ্রান্সের কালো বীজ প্ল্যান্ট্যাগো ইন্ডিকা (Plantago indica), স্পেনীয় প্ল্যান্ট্যাগো সিলিয়াম (Plantago psyllium) ও ভারতীয় সাদাটে বীজ প্ল্যান্ট্যাগো ওভাটা (Plantago ovata)।

এই গাছ লম্বায় দেড় থেকে দুই ফুট হয়ে থাকে। এর ফল দু’কোষ বিশিষ্ট হয়ে থাকে যা লম্বায় ৭-৮ মিমি. হয়ে থাকে। ভেতরের বীজ ৩ মিমি. হয়ে থাকে। এর উপরে খোসা পিচ্ছিল থাকে। যেটা ইসবগুলের ভুসি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

বীজের খোসাগুলো ভুসি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে। এই ভুসি আমরা সাধারণত শরবত বানিয়ে খেয়ে থাকি। উপকারী এই ইসবগুল আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানা ধরণের রোগ থেকে মুক্তি দেয়।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম আমরা যেটা জানি তা হলো, দুই বা তিন চামচ ইসবগুলের ভুসি এক ক্লাস পানিতে রাতে ভিজিয়ে সকালে শরবত বানিয়ে খাই। কিন্তু এছাড়াও আরো অনেক নিয়ম আছে ইসবগুলের ভুসি খওয়ার। বেশির ভাগক্ষেত্রেই আমরা ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবার জন্য খেয়ে থাকি। কারণ এর মধ্যে থাকা উপাদান আমাদের মলকে নরম করে ও আমরা সহজে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাই। এখানে আমরা বিভিন্ন ধরণের উপকার পেতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম গুলো জেনে নিবো।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে: কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করতে হলে আপনাকে ২ চামচ করে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করতে হবে। এর জন্য অবশ্যই ভালো করে ভিজিয়ে নিতে হবে। ভালো করে ভিজিয়ে নিলে এটি জল শোষণ করে নিয়ে পাকস্থলীতে গিয়ে মল বৃদ্ধি ও নরম করতে সাহয্য করে।

ডায়রিয়া নিরাময়ে: ডায়রিয়াতেও ইসবগুলের ভুসি থেকে উপকার পাওয়া যায়। এজন্য আপনি ২ চা চামচ ভুসি ১৫ মিলিলিটার টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাবারের পরে খাবেন।

এরপর ১ গ্লাস পানি খেয়ে নেবেন। এর মধ্যে থাকা প্রিবায়োটিক উপাদান পাকস্থলীর ইনফেকশন দূর করে ডায়রিয়া থেকে মুক্তি দেয়।
ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম: ইসবগুলের ভুসি ওজন কমানোর জন্যেও কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। ওজন কমাতে হলে প্রতিদিন সকালে কুসুম গরম পানিতে ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি এবং সাথে অল্প পরিমাণে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। এই শরবত আপনি সকালের নাস্তার আগে খাবেন। আপনি চাইলে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেতে পারেন। তবে অবশ্যই ভালো ভাবে ভেজানোর কথা মাথায় রাখতে হবে।

হজমের সমস্যা হলে যেভাবে খাবেন: হজমজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন। এক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম, ঘোলের সাথে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিবেন। যাতে করে ভালো করে ভিজতে পারে। খাবারের পর ইসবগুল দেয়া ঘোলের শরবত খাবেন। হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। কারণ ইসবগুলের ভুসি পাকস্থলিতে বর্জ্য নিষ্কাশনে সহায়তা করে হজমের প্রক্রিয়াকে সহজ করে।

আরো পড়ুন  যে ১৩টি খাবার অতিরিক্ত ওজন কমাতে আগুনের মত কাজ করে

পাইলসের সমস্যায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম: পাইলসের সমস্যার জন্য ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি কুসুম কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করতে হবে। ইসবগুলের ভুসি আপনার মলকে নরম করে তাই। যাদের পাইলসের ব্যথা রয়েছে তাদের ব্যথা কমাতে ইসবগুলের ভুসি কাজ করে।
খাদ্যানালির প্রদাহ বা এসিডিটি কমাতে যে ভাবে খাবেন: ২ চা চামচ ইসবগুল ১ গ্লাস ঠাণ্ডা পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। সাধারণত যাদের এ সমস্যা রয়েছে, খাওয়ার পর তাদের পেট-বুক জ্বালাপোড়া করা ও পেটে গ্যাস হওয়া গ্যাস হয়ে থাকে। খাবারের পর এটি খেলে পাকস্থলীর গায়ে এটি আবারণ সৃষ্টি করে। ফলে খাবারে সৃষ্ট এসিড থেকে সমস্যা কম হয়।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম: প্রতিদিন খাবারের পর দুই চামচ ইসবগুলের ভুসির সাথে এক গ্লাস দুধ বা পানি পান করবেন। এটি পাকস্থলীতে জেলির ন্যায় পদার্থের রূপ নেয় এবং সেটা গ্লুকোজের ভাঙ্গন ও শোষণের গতিকে ধীর করে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
নোট: তবে মনে রাখতে হবে, কখনোই দইয়ের সাথে এই ভুসি মিশিয়ে খাবেন না,যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে। কারণ এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

ইসবগুলের ভুসির প্রক্রিয়াজাতকরণ

ইসবগুল (Plantago ovata) গাছ দেড়-দুই ফুটের মতো লম্বা হয়। ফল দুইকোষ বিশিষ্ট, ৭-৮ মিলিমিটার লম্বা যার ভিতরে ৩ মিলিমিটার লম্বা বীজ থাকে। বীজ দেখতে নৌকার মতো যার খোসায় পিচ্ছিল মিউসিলেজ বা শ্লেষ্মা থাকে। এটা এক ধরনের রবিশস্য যাকে আমরা ‘চৈতালি’ বলি কারণ হেমন্তে বীজ বপন করে চৈত্র মাসে ফসল তোলা হয়, যেমনটা করা হয় মুগ-মসুরের বেলায়। উপমহাদেশে ইসবগুলের চাষ সবচেয়ে বেশি হয় ভারতের গুজরাত অঞ্চলে, অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে আছে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ। গুজরাত থেকে আমেরিকা ও ইউরোপে ইসবগুল রফতানি হয়। বিস্তৃতভাবে ধরলে, অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ইসবগুলের চাষ হতে পারে যখন বৃষ্টি থাকে না, তাপমাত্রাও থাকে ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে। আর্দ্রতাপূর্ণ পরিবেশ, মেঘমেদুর আকাশ আর রাতের বেলা তাপমাত্রা বেশি হলে ফলন খুব কমে যায় ফসলের। আর পুষ্ট বীজ তোলার মৌসুমে বৃষ্টি হলে রক্ষা থাকে না, ক্ষতির পরিমাণ দেখে ইসবগুল-নির্ভর চাষীদের পরিবারে হাহাকার নেমে আসে। ইসবগুলের বীজ ৩ মাস পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকে, এ সময়ে ঠাণ্ডা বা গরম-পানি দিয়ে স্কারিফিকেশন বা ঘষামাজা করেও বীজ থেকে চারা গজানো যায় না। কিন্তু মৌসুমে, উপযুক্ত তাপমাত্রায় ৯০ শতাংশ বীজ থেকে চারা গজিয়ে থাকে। বীজের এই প্রকৃতিগত সুপ্তাবস্থার কারণে এখন পর্যন্ত বীজ থেকে বছরে বহুবার (Multivoltine) ফসল তৈরি করা সম্ভব হয়নি। বীজ থেকে খোসা আলাদা করা এক ধরনের সূক্ষ্ম কাজ। এর জন্য সাধারণ যাঁতাকল ছাড়াও নানারকম আধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে যেমন, ফ্লুইড এনার্জি-মিল, বল-মিল, ভাইব্রেটিং-মিল এবং পিন-মিল। বহুল ব্যবহৃত পিন-মিলের দুটো চাকাতেই চক্রাকারে অজস্র পিন লাগানো থাকে। চাকাগুলো বিপরীত গতিতে ঘোরার সময় দুপাশের পিনে ঠোকা খেয়ে ইসবগুলের বীজ থেকে খোসা আলগা হয়ে যায়। ফ্লুইড এনার্জি-মিলে প্রকোষ্ঠের মধ্যে অতিবেগে স্টিম বা বায়ু চালিত করার ফলে বীজে বীজে ঠোকাঠুকি লেগে খোসা আলাদা হয়ে যায়। বল-মিলে বীজের মিশ্রণের সঙ্গে পাথর বা ধাতব বল মিশিয়ে ঘোরানো হয়, ভাইব্রেটিং মিলে কম্পনের মাধ্যমে খোসা আলাদা করা হয়। যেভাবেই খোসা আলাদা করা হোক, সব পদ্ধতিরই প্রধান লক্ষ্য থাকে খোসা উৎপাদন করতে গিয়ে যেন বীজ ভেঙে টুকরো না হয়ে যায়। যাহোক সব কারখানাতেই কিছু না কিছু বীজ ভেঙে যায়, যেগুলো চালুনি দিয়ে আলাদা করা হয়। আবার খড়কুটো ধুলোবালি থেকে মুক্ত করার জন্য যেভাবে কুলো দিয়ে ধান ওড়ানো হয় সেভাবে খোসাও ওড়ানো হয়, সাবধানে হাল্কা বাতাসে।

আরো পড়ুন  শীতে শিশুর সর্দি-কাশি ও করণীয়

ইসবগুলের ভুসির ঔষধি গুণ

ইসবগুলের ভুসিতে রয়েছে নানা ধরণের ঔষধিগুণ। প্ল্যান্টাগো ওভাটা এই গাছের বীজের খোসা হলো ইসবগুলের ভুসি। এটি এক ধরণের ঔষধি গাছ বলে স্বীকৃত আছে। বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনের মধ্যে অন্যতম হলো,

ইসবগুল মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। ইসবগুলের ভুসি [৪] বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

এর মধ্যে যে অদ্রবণীয় ও দ্রবণীয় খাদ্য আঁশ থাকে তা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য খুব ভালো।
ডায়রিয়া ও পাকস্থলীর ইনফেকশন সারায়।
অ্যাসিডিটির সমস্যা প্রতিকার করে।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকারী।
পাকস্থলীর বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করে ও হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
এর খাদ্য আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও হৃদরোগ থেকে সুরক্ষিত করে।
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্ররোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা

আমরা শুধু কোষ্ঠ্য কাঠিন্য এর জন্য এটি ব্যবহার করলেও ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা অনেক। এটি আমারদের দেহের জন্য উপকারি একটি উপাদান। এর মধ্যে থাকা ফাইবার বিভিন্ন ভাবে আমাদের দেহের উপকার করে। ইসবগুলের ভুসির কিছু উপকারিত হলো

Leave a Reply

Your email address will not be published.