চুল পড়া কমানোর ঘরোয়া উপায়

পরিবেশ দূষণ, বয়স, স্ট্রেস, স্মোকিং, পুষ্টির অভাব, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, জেনেটিক কারণ, স্কাল্প ইনফেকশন, হেয়ার প্রডাক্টের(Hair Product) মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, বেশ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে, থাইরয়েড, অটোইমিউন ডিজজ, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম, অ্যানিমিয়াসহ নানা কারণেই চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে।

আমাদের মাথা থেকে প্রতিদিন ৫০-১০০টা চুল পড়ে(Hair fall) যাওয়া একেবারে স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এর থেকে বেশি মাত্রায় পড়তে শুরু করলেই চিন্তার বিষয়। এক্ষেত্রে যত শিগগির সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে কিন্তু মাথা ফাঁকা হয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এখানে এমন কিছু ঘরোয়া উপায় বাতলে দেওয়া হলো, যেগুলো ব্যবহার করলে চুল পড়া(Hair fall) কমবে লক্ষণীয়ভাবে।

আমলকি : চুল পড়া আটকানোর পাশপাশি চুলের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আমলকির(Amalaki) কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ এতে উপস্থিত ভিটামিন সি চুলের পুষ্টি বৃদ্ধি করে, সেই সঙ্গে স্কাল্পের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়। ফলে চুল পড়ার প্রবণতা কমে। প্রসঙ্গত, দেহে ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি দেখা দিলে চুল পড়া বেড়ে যায়। তাই এই ভিটামনিটির ঘাটতি যেন কখনও না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রথমে ১ চামচ আমলকির রসের সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস(Lemon juice) মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রনটি ভাল করে চুলে লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিয়ে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে।

তেল মাসাজ : চুল পড়া আটাকাতে প্রতিদিন তেল মাসাজ করাটা জরুরি। এমনটা করলে মাথার ত্বকে রক্ত প্রবাহ খুব বেড়ে যায়। ফলে চুলের গোড়া আরও শক্তপোক্ত হয়। আর একবার চুলের গোড়া মজবুত হয়ে গেলে চুল পড়া স্বাভাবিক ভাবে কমে যায়। এক্ষেত্রে নারকেল তেল(Coconut oil), বাদাম তেল, অলিভ অয়েল অথবা আমলার তেল ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পড়ুন  চুল পড়া রোধ করার প্রাকৃতিক উপায় জেনে নিন

মেথি-গাছ : চুল পড়া(Hair fall) আটকাতে মেথি দারুন কাজে আসে। আসলে এতে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো যখনই দেখবেন চুল পড়ার হার খুব বেড়ে গেছে, তখনই অল্প করে মেথি বীজ নিয়ে এক গ্লাস পানি এক রাত ভিজিয়ে রাখবেন। পরদিন বীজগুলি বেটে নিয়ে একটা পেস্ট বানাবেন। সেই পেস্টটা ভাল করে মাথায় লাগিয়ে ৪০ মিনিট রেখে দিয়ে ধুয়ে নেবেন। টানা একমাস, প্রতিদিন এই মিশ্রনটি মাথায় লাগালে চুল পড়া(Hair fall) তো কমবেই, সেই সঙ্গে মাথা ভর্তি চুলের স্বপ্নও পূরণ হবে।

পেঁয়াজের রস : এতে থাকা সালফার হেয়ার ফলিকেলসে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দিয়ে নিমেষে চুল পড়া কমিয়ে দেয়। এখানেই শেষ নয়, পেঁয়াজের রসে রয়েছে বিপুল পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ, যা স্কাল্পে ঘর বেঁধে থাকা জীবাণুদের মেরে ফেলে। ফলে স্কাল্প ইনফেকশনের সঙ্গে সঙ্গে চুল পড়ার অশঙ্কাও হ্রাস পায়। কীভাবে চুলে লাগাবেন পেঁয়াজের রস(Onion juice)? ১ টা পেয়াজ থেকে রস সংগ্রহ করে নিন। তারপর সেই রস সরাসরি মাথায় লাগিয়ে মাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু(Shampoo) করে নিন। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে ২-৩ বার এই পদ্ধতিতে চুলের পরিচর্যা করলে ফল পাবেন একেবারে হাতে-নাতে।

অ্যালোভেরা : এতে রয়েছে এমন কিছু এনজাইম, যা চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাকে। ফলে চুল পড়লেও মাথা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। অ্যালো ভেরার(Aloe vera) উপকারিতা কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যায় না। এতে উপস্থিত অ্যালকেলাইন প্রপার্টিজ স্কাল্পের পি এইচ লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ফলে চুল পড়ার হার কমে। কীভাবে ব্যবহার করতে হবে এই প্রকৃতিক উপাদানটিকে? পরিমাণ মতো অ্যালো ভেরা জেল(aloe vera gel) নিয়ে স্কাল্পে লাগিয়ে ফেলুন। কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করে হালকা গরম জলে ভাল করে মাথাটা ধুয়ে নিন। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে ৩-৪ বার এই ভাবে অ্যালোভেরা পানি মাথায় লাগালে দারুন উপকার পাওয়া যায়।

নিম পাতার রস : তাজা নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে সিদ্ধ করে রস বের করুন। এরপর ঠাণ্ডা করে তা দিয়ে আপনার চুল(Hair) এবং মাথার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার বা দুইবার এই প্রক্রিয়াটি অনুসরন করুন।

মধু এবং জলপাই তেল : একটি পাত্রে দুই টেবিল চামচ মধু এবং দুই টেবিল চামচ জলপাই তেল নিন। এই দুটো ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর এতে এক টেবিল চামচ দারুচিনির গুঁড়া(Cinnamon powder) ভাল করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি চুলে এবং মাথার ত্বকে মেখে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে দিন। নতুন চুল গজানোতে বেশ কার্যকর এই ওষুধ।

আরো পড়ুন  চুলকে তাড়াতাড়ি লম্বা করার জন্য চমৎকার একটি সহজ উপায়

ঘৃতকুমারীর রস এবং নিমের পেস্ট : ঘৃতকুমারীর রসের সাথে শুকনো নিম পাতার চূর্ণ নিন। ভালোভাবে মেশান। এরপর কয়েক ফোঁটা ভেষজ আমলার তেল(Amla oil) যোগ করে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি আপনার মাথার ত্বকে এবং প্রতিটি চুলের গোঁড়ায় ভাল ভাবে মাখুন। পেস্টটি আধা ঘণ্টা রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক থেকে দুইবার এটি ব্যবহার করুন।

ডিমের সাদা অংশ এবং দধির মিশ্রণ : একটি পাত্রে দুটি ডিমের সাদা অংশ আলাদা করে নিন এবং এতে দুই টেবিল চামচ তাজা দধি বা ঘোল যোগ করে ভালভাবে মেশান। তাতে এক টেবিল চামচ শিকাকি বা নিম পাউডার যোগ করুন। এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালভাবে মাখুন এবং ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। চুল ঝরে পড়া রোধে পদ্ধতিটি প্রতি সপ্তাহে একবার অনুসরণ করুন।

তামাকের রস : নিয়মিত ব্যবহারের শ্যাম্পুর সাথে কয়েক ফোঁটা তামাকের রস(Tobacco juice) মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা চুলপড়া রোধে অত্যন্ত কার্যকর হয়।

চা পাতার নির্যাস : লেবুর রসের সাথে চা পাতার নির্যাস মিশিয়ে তা দিয়ে চুল(Hair) ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং চুল ঝরে পড়া রোধ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.