শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থেকে অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে অনেকে পার্লারে ছুটে যান। মহিলাদের এটা সবসময়ই প্রয়োজন হয়। তবে অনেকেরই হয়ত জানা নেই পার্লারে না গিয়ে বাড়িতেই খুব সহজেই এই অবাঞ্ছিত লোম দূর করা যায়।
অবাঞ্ছিত লোম দূর করার উপায়
বর্তমানে শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হল ওয়াক্সিং। তবে পার্লারে গিয়ে এই পদ্ধতি খুব ব্যয়বহুল। সকলের পক্ষে হয়ত সবসময় এত টাকা দিয়ে ওয়াক্সিং করানো সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাড়িতে ‘বডি সুগারিং’ এর মাধ্যমে আপনারা শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে পারেন।
প্রাচীন মিশরের প্রায় সকল নারীই সৌন্দর্য সচেতন ছিলেন। আর সেই সময়ের সৌন্দর্য চর্চার কিছু বিষয় এখনও ব্যবহৃত হয়। যার মধ্যে অন্যতম লেবু ও চিনি’।
উপকরণ –
চিনি দুই কাপ।
এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ লেবুর রস।
এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ পানি।
ঘরোয়া পদ্ধতি –
সব উপকরণ একটি সস প্যানে অল্প তাপে গরম করতে হবে। সব উপরকরণ একসঙ্গে মিশে গেলে দেখবেন হালকা ব্রাউন রঙ চলে আসছে। এটা ভালো ভাবে মিশে গেলে ঠাণ্ডা করে একটি পাত্রে ভরে রাখতে হবে। মিশ্রণটি এমন পাত্রে রাখবেন যাতে পরে আবার প্রয়োজনে গরম করে নিতে পারেন।
এরপর মিশ্রণটি অল্প ঠাণ্ডা করে নিয়ে ত্বকে লাগান পাতলা কোনও কাঠি কিংবা প্লাস্টিকের পাত দিয়ে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন ৫-১০ মিনিট। তারপর পাতলা সুতির কাপর দিয়ে যেভাবে ওয়াক্সিং করেন সেভাবে লোম তুলে ফেলুন।
চিনি ব্যবহার করে সহজেই শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করা সম্ভব।
‘ওয়াক্সিং’ করা যন্ত্রণার। বরং কম যাতনায় শরীরের অবাঞ্ছিত লোম তোলা উপায় হল ‘সুগারিং’।
রূপচর্চা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে-
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শরীরের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণের পদ্ধতি হল ‘সুগারিং’। আর নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পদ্ধতিটির প্রধান উপাদানই হল ‘সুগার’ অর্থাৎ চিনি। সঙ্গে মেশাতে হবে লেবুর রস ও পানি।
অন্যান্য ‘ওয়্যাক্সিং’ পদ্ধতির মতো এখানে কাগজের স্ট্রিপ-ও প্রয়োজন নেই, হাত দিয়ে টেনেই লোমসহ মিশ্রণটি তুলে ফেলা যাবে।
তৈরির পদ্ধতি: আধা কাপ চিনির সঙ্গে দুই টেবিল-চামচ লেবুর রস ও পানি মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি হালকা আঁচে গরম করুন। বলক আসা মাত্রই ‘হুইস্ক’ বা নাড়ুনি দিয়ে নাড়তে হবে।
কিছুক্ষণ পরেই মিশ্রণটির রং পরিবর্তিত হতে দেখা যাবে। বাদামি থেকে সোনালি রং হওয়া মাত্রই চুলা থেকে মিশ্রণটি নামি ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন। দেখবেন একটা আঠালো মিশ্রণ তৈরি হয়েছে। অনেকটা মধুর মতো। তবে মধুর চেয়ে ঘন ও আঠালো হবে।
এরপর হাত পানিতে ভিজিয়ে হালকা গরম থাকা অবস্থায় মিশ্রণটি হাতে নিয়ে গোল বলের মতো তৈরি করুন। গরম বেশি হলে বার বার হাত পানিতে ভিজিয়ে মিশ্রণের বলটিতে পানি মাখিয়ে ঠাণ্ডা করুন।
এবার যে স্থানের লোম অপসারণ করবেন সেখানে মাখাতে হবে। লোম যেদিকে বের হয় তার উল্টা দিকে মিশ্রণটি প্রয়োগ করতে হবে। কয়েক সেকেন্ড রেখে দিয়ে লোম যেদিকে বাড়ে সেদিকে টেনে মিশ্রণটি তুলতে হবে। এতে লোমের বৃদ্ধি প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং তোলার সময় লোম ছিঁড়বে না।
ব্যবহারের স্থান: শরীরের যেকোনো অংশেই এই মিশ্রণ ব্যবহার করা যায়। তবে পুরুষদের দাড়ি-গোঁফ তোলার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কার্যকর হবে না। কারণ তা অনেক বেশি শক্ত এবং মোটা।
যন্ত্রণার মাত্রা: ‘সুগারিং’ পদ্ধতিতে যন্ত্রণার মাত্রা ‘ওয়্যাক্সিং’য়ের তুলনার অনেক কম, তবে শেইভ করার মতো যন্ত্রণাহীন নয়।
কতবার করা যাবে: প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ায় যতবার ইচ্ছা ততবার এই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন। যখনই আপনার মনে হবে অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করতে হবে তখনই চিনি, লেবু আর পানি নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে পারেন।
সাধারণত লোমের দৈর্ঘ্য একটি চালের দানার সমান বা এক ইঞ্চির আট ভাগের এক ভাগ হলে লোম অপসারণ করা হয়। যাদের লোম দ্রুত বাড়ে তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তাও দ্রুত দেখা দিতে পারে। আবার সময়ের সঙ্গে লোমের মাত্রাও কমবে ‘ওয়্যাক্সিং’য়ের মতোই।
উপকারিতা: প্রচলিত ‘ওয়াক্সিং’ পদ্ধতিতে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ চুল ছিঁড়ে যায়। তবে ‘সুগারিং’ প্রক্রিয়ার এই মাত্রা অনেকটাই কমে আসে। কারণ পদ্ধতিটি ‘ওয়াক্সিং’য়ের তুলনায় মসৃণ এবং মৃদু মাত্রার।
আবার ‘ওয়্যাক্সিং’য়ের ক্ষেত্রে মিশ্রণ প্রয়োগের সময় তাপ প্রয়োগ করতে হয়। ফলে অনেক সময় ত্বক পুড়ে যায়। ‘সুগারিং’য়ে এই ঝামেলা নেই।
এই প্রাকৃতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে আপনি ফেসিয়াল হেয়ার দূর করতে পারেন।
১) চিনি ও লেবুর রস
দুই টেবিল চামচ চিনি ও লেবুর রস এবং ৮-৯ টেবিল চামচ পানি নিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার সেটাকে গরম করুন যতক্ষণ না বাবলস বেরোচ্ছে। তারপর মিশ্রণটা ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ঠোঁটের ওপরে লাগান। ২০-২৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন ঠান্ডা পানি দিয়ে। লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে কাজ করে। গরম চিনি ঠোঁটের ওপরের লোমের সঙ্গে লেগে যায়, যা লোমগুলোকে তুলতে সাহায্য করে।
২) মধু ও লেবুর রস
দুই টেবিল চামচ চিনি ও লেবুর রস এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে গরম করুন। তিন মিনিট মতো গরম করে তারপর জল মেশান। মিশ্রণটা পাতলা হয়ে গেলে ঠান্ডা হতে দিন। প্রথমে ঠোঁটের ওপরে কর্নস্টার্চ লাগিয়ে নিন, তারপর মিশ্রণটা লাগান। ওয়াক্সিং স্ট্রিপ বা কটনের কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। যে ডিরেকশনে আপনার হেয়ার গ্রোথ হয়েছে সেই ডিরেকশনে মিশ্রণটা লাগাতে হবে, আর মোছার সময় উল্টো ডিরেকশনে মুছতে হবে।
৩) ওটমিল এবং কলা
২ টেবিল চামচ ওটমিল গুঁড়োর সঙ্গে একটা পাকা কলা মিশিয়ে নিন ভালো করে। এই পেস্টটা ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। লোম দূর করার সাথে সাথে আপনার স্কিনে ঔজ্বল্য আনবে এই প্যাক। ব্ল্যাকহেডসের সমস্যায় ভুগছেন? দেখুন ব্ল্যাকহেডস দূর করার ঘরোয়া উপায়
৪) ডিম ও কর্নস্টার্চ
১ টেবিল চামচ কর্নস্টার্চ ও চিনির সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মেশান। যে জায়গার লোম দূর করতে চাইছেন সেখানে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
৫) হলুদ ও দুধ
১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ দুধ মেশান। মিশ্রণটা ঠোঁটের ওপর লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। অবাঞ্চিত লোম দূর করতে দারুন কাজ করে এই মিশ্রণটি।
উপরের কোনও প্যাক ব্যবহারের আগে একবার স্কিন টেস্ট করে নিতে পারেন। তাহলে আপনি জানতে পারবেন যে, প্যাকটি আপনার স্কিনে শুট করবে কিনা। স্কিন টেস্ট করার জন্য অল্প পরিমাণ পেস্ট বানিয়ে কান বা হাতের ভেতরের দিকে লাগিয়ে রাখুন। নির্দিষ্ট সময় রেখে ধুয়ে ফেলুন। প্যাক লাগানোর পর যদি আপনার ত্বক লাল হয় বা সামান্য চুলকোয়, তাহলে বুঝবেন লোম দূর করার এই প্রতিকার আপনার স্কিনের জন্য উপযুক্ত নয়।