স্বামী স্ত্রী সহ বাস করার সময় কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়

স্বামী স্ত্রী সহবাস (physical relation) করার সময় কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। কিছু আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।

১। রাত্রি দ্বি-প্রহরের আগে সহবাস করবে না।

২। ফলবান গাছের নিচে স্ত্রী সহবাস (physical relation)করবে না।

৩। সহবাসের প্রথমে দোয়া পড়বেন। স্ত্রী সহবাসের দোয়া। তারপর স্ত্রীকে আলিঙ্গন করবেন। স্ত্রী যদি ইচ্ছা হয় তখন তাকে ভালো বাসা দিবে এবং আদর
সোহাগ দিবে। চুম্বন দিবে। তখন উভয়ের মনের পূর্ণ আশা হবে সহবাস(physical relation)। তখন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করবেন।

৪।স্ত্রী সহবাস করার সময় নিজের স্ত্রীর রূপ দর্শন শরীর স্পর্শন ও সহবাসের(physical relation) সুফলের প্রতি মনো নিবেশ করা ছাড়া অন্য কোনো সুন্দরি স্ত্রী লোকের বা অন্য সুন্দরী বালিকার রুপের কল্পনা করিবে না। তাহার সাহিত মিলন সুখের চিন্তা করবেন না। স্ত্রীর ও তাই করা উচিৎ।

৫। রবিবারে সহবাস করবেন না।

৬। স্ত্রীর হায়েজ-নেফাসের সময় উভয়ের অসুখের সময় সহবাস (physical relation)করবেন না।

৭। বুধবারের রাত্রে স্ত্রীর সহবাস করবেন না।

৮। চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে স্ত্রী সহবাস(physical relation) করবেন না।

৯। স্ত্রীর জরায়ু দিকে চেয়ে সহবাস করবেন না। ইহাতে চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে যায়।

১০। বিদেশ যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রী সহবাস (physical relation)করবেন না।

১১।সহবাসের সময় স্ত্রীর সহিত বেশি কথা বলবেন না।

১২।নাপাক শরীরে স্ত্রী সহবাস কবেন না।

১৩। উলঙ্গ হয়ে কাপড় ছাড়া অবস্থায় স্ত্রী সহবাস(physical relation) করবেন না।

১৪। জোহরের নামাজের পরে স্ত্রী সহবাস করবেন না।

১৫। ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস করবেন না।

১৬।উল্টাভাবে স্ত্রী সহবাস করবেন না।

১৭। স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস (physical relation)করবেন না।

১৮।পূর্ব-পশ্চিম দিকে শুয়ে স্ত্রী সহবাস করবেন না।

>> সহবাস সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদীস <<
>> সহীহ বুখারী ৩০৯৪।
ইবনুূু সালাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনুূু সালামের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর মদিনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কেও অবগত নয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সা’দৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের সা’দৃশ্য হয়? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইমাত্র জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবি বলেন, তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, সে তো ফিরিস্তাগণের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস (physical relation) করে তখন যদি পুরুষের বীর্যের পূর্বে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সা’দৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি-নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইয়াহূদিরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রতনা করবে। তারপর ইয়াহূদিরা এলো এবং আবদুল্লাহ (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনুূু্‌ সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যাক্তির পুত্র। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহন করে, এতে তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তার তাঁকে রক্ষা করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তির সন্তান এবং তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল।

>> সহীহ বুখারী ৪১৭১।
ইসহাক (রহঃ) নাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনুূু উমর (রাঃ) যখন কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখন কুরআন তিলাওয়াত হতে অবসর না হয়ে কোন কথা বলতেন না। একদা আমি সূরা বাকারা পাঠ করা অবস্থায় তাঁকে পেলাম। পড়তে পড়তে তিনি এক স্থানে পৌঁছলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি জানো, কি উপলক্ষ্যে এ আয়াত নাযিল হয়েছে? আমি বললাম, না। তিনি তখন বললেন, অমুক অমুক ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়েছে। তারপর আবার তিনি তিলাওয়াত করতে থাকেন। আবদুস সামাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেন আমার পিতা, তিনি বলেন, আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করে আইয়ুব, তিনি নাফি‘ থেকে আর নাফি‘ ইবনুূু উমর (রাঃ) থেকে। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার। (২: ২২৩)। রাবী বলেন, স্ত্রীলোকের (wife)  পশ্চাৎ দিক দিয়ে সহবাস (physical relation)করতে পারে। মুহাম্মদ ইবনুূু ইয়াহইয়া ইবনুূু সাঈদ তাঁর পিতা থেকে, তিনি উবায়দুল্লাহ থেকে, তিনি নাফি‘ থেকে এবং তিনি ইবনুূু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

আরো পড়ুন  নবজাতকের স্বাস্থ্য সচেতনতা জেনে নিন

>> সহীহ বুখারী ৪১৭২।
আবূ নু‘আইম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহুদীরা বলতো যে, যদি কেউ স্ত্রীর (wife) পেছন দিক থেকে সহবাস (physical relation)করে তাহলে সন্তান টেরা চোখের হয়। তখন (তাদের এ ধারণা রদ করে) আয়াত অবতীর্ণ হয়।

>> সহীহ বুখারী ৪৩২৪।
হাসান ইবনুূু মুহাম্মদ (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনুূু আববাস ইবনুূু জা‘ফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনুূু আববাস (রাঃ)-কে এমনিভাবে পড়তে শুনেছেন, (১১ : ৫) জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বক্ষদেশ ঘুরিয়ে দেয় যেন আল্লাহর নিকট হতে লুকাতে পারে। শুন, তারা তখন কাপড়ে নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করে, তিনি তখনও জানেন যা কিছু তারা চুপিসারে বলে আর প্রকাশ্যভাবে বলে। নিশ্চয় তিনি জানেন যা কিছু অন্তর সমূহে নিহিত রয়েছে। ” মুহাম্মদ ইবনুূু আববাস বলেন, আমি তাঁকে এর মর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, কিছু লোক খোলা আকাশের দিকে উন্মুক্ত হওয়ার ভয়ে পেশাব-পায়খানা অথবা স্ত্রী (wife) সহবাস (physical relation)করতে লজ্জাবোধ করতে লাগল। তারপর তাদের সম্পর্কে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।

>> সহীহ বুখারী ৪৩২৫।
ইবরাহীম ইবনুূু মূসা (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনুূু আববাস ইবনুূু জা‘ফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনুূু আববাস (রাঃ) পাঠ করলেন। আমি বললাম, হে আবূল আববাস দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে? তিনি বললেন, কিছু লোক স্বীয় স্ত্রীর (wife) সাথে সহবাসের (physical relation)সময় অথবা পেশাব-পায়খানা (করার) সময় (উলঙ্গ হতে) লজ্জাবোধ করত, তখন আয়াত অবতীর্ণ হয়।

আরো পড়ুন  মাত্র ১ বার ব্যবহারে দাদ,চুলকানি ও চর্মরোগ এর মত সমস্যা দূর হবে।সারাজীবনেও আর চর্মরোগ ফিরে আসবে না

>> সহীহ মুসলিম ৪১৩৯।
আবূ রাবী আতাকী ও আবূ কামিল জাহদারী ও ফোযায়েল ইবনুূু হুসাইন (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সুলায়মান (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ষাটজন সহধর্মিনা ছিলো। একদা তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি অদ্যর রজনীতে সকল স্ত্রীর (wife) কাছেই গমন করবো। অর্থাৎ সহবাস (physical relation)করবো। অতএব, প্রত্যেকেই গর্ভবতী হবে এবং প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করবে যারা (ভবিষ্যতে) আল্লাহর পথে অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করবে। কিন্তু পরিশেষে একজনস্ত্রী ব্যতীত আর কেউই গর্ভবতী হননি। এরপর তিনি অর্দ্ব মানবাকৃতির (অপূর্ণাঙ্গ) একটি সন্তান প্রসব করলেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তিনি তখন ইনশা আল্লাহ বলতেন, তবে নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করতেন, যারা প্রত্যেকেই অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতেন।

>> আবু দাউদ ২২৯।
হাফ্স ইবনুূু উমার আবদুল্লাহ্ ইবনুূু সালামা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং অপর দুই ব্যক্তি একজন আমার স্বগোত্রীয় এবং অপরজন সম্ভবতঃ বানূ আসা’দ গোত্রের হযরত আলী (রাঃ) -র নিকট যাই। আলী (রাঃ) উক্ত ব্যক্তিদ্বয়কে কোন কাজে পাঠিয়ে দেয়ার সময় বলেন, তোমরা উভয়েই সক্ষম ব্যক্তি। কাজেই তোমরা তোমাদের দ্বীনকে নিরোগ করে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য সচেষ্ট হও। অতঃপর তিনি (আলী) পায়াখানায় যান এবং সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে পানি চেয়ে নিয়ে (হাত) ধৌত করলেন। অতঃপর তিনি কুরআন তিলাওয়াত শুরু করেন। সমবেত লোকেরা তা অপছন্দ করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়খানা হতে বের হয়ে আমাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন এবং আমাদের সাথে গোশতও-খেতেন। স্ত্রী- (wife) সহবাস (physical relation)জনিত অপবিত্রতা ছাড়া অন্য কোন অপবিত্রতা তাকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে বিরত রাখতে পারত না। (তিরমিযী, ইবনুূু মাজাহ, নাসাঈ)।

হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি সহবাসের ইচ্ছা করে, তার নিয়্যাত যেন এমন হয় যে, আমি ব্যভিচার থেকে দূরে থাকবো। আমার মন এদিক ওদিক ছুটে বেড়াবে না আর জন্ম নেবে নেককার ও সৎ সন্তান। এই নিয়্যাতে সহবাস (physical relation)করলে তাতে সওয়াব তো হবেই সঙ্গে সঙ্গে নেক উদ্দেশ্যও পূরণ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.