“বাচ্চাদের খাবার দাবার নিয়ে আবার এত চিন্তার কি আছে? তারা তো খাবে শুধু খিচুড়ি আর সুজি।”- এমনটা ভেবে থাকেন অনেক অভিভাবকই। এমন চিন্তা কিন্তু একদম ঠিক নয়। শিশুদের মেধা(Talent) বিকাশ তার জন্মের প্রথম ৫ বছরের মাঝেই হয়ে যায়। আর এই সময় তার যত্ন আরও বেশি প্রয়োজন, কেননা এখন তার পরিপার্শ্ব সম্পর্কে ধীরে ধীরে বুঝতে শিখছে। সাথে শিশুর সঠিকভাবে বৃদ্ধির জন্য দরকার সুষম খাবার। ১০ থেকে ১২ মাস বয়সী বাচ্চা কিন্তু আগের চাইতে খাবার গিলে ফেলার ব্যাপারটি অনেকটাই বেশি আয়ত্বে এনে ফেলেছে। তার দাঁত(Teeth) উঠেছে কিছু কিছু, তাই চিবিয়ে খাওয়া শিখেছে আর খাবার মুখ থেকে ঠেলে ফেলার প্রবণতা কমিয়ে দিয়েছে অনেকটাই। এখন আপনার সন্তান খাবার সময় নিজের চামচ বা খাবার বাটি নিজেই ধরে খেতে চাইবে। তাই এখন আগের খাবারের সাথে নতুন কিছু খাবার তার তালিকাতে যোগ করে দিতে হবে।
১০ থেকে ১২ মাস বয়সী বাচ্চার খাবারঃ
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। সেই সাথে আয়রন যুক্ত খাবার(Iron food) যোগ করতে হবে। বুকের দুধ খাওয়াতে না পারলে ডাক্তারের পরামর্শে ফর্মুলা দুধ দিতে পারেন। এ সময় তাকে চাল, বার্লি, গম, ওট পিষে সুজি করে দেয়া যেতে পারে। এটা আপনার সন্তানের আয়রনের ঘাটতি পুরন করবে। খিচুড়ি খেতে দিতে হবে চাল ডাল দিয়ে। সাথে দিতে পারেন বিভিন্ন সবজি। এখন স্বাদের জন্য লবনের পাশাপাশি অল্প একটু মসলা আর তেল বা দুগ্ধজাত খাবার যেমন অল্প একটু পাস্তুরিত চীজ বা সামান্য পরিমানে ঘি দিতে পারেন। ঘি বা চীজ দিলে আপনার সন্তানের হজম(Digestion) করার ক্ষমতার উপরে নির্ভর করে দিতে হবে। হজমে সমস্যা হলে দেয়ার দরকার নেই। তবে তার বাড়ন্ত শরীরে এসব উপাদান স্নেহ জাতীয় খাবারের চাহিদা মেটাবে। ফল জুস করে দিতে পারেন বা ছোট ছোট টুকরা করে দিতে পারেন অথবা চাইলে চটকে নিয়েও দিতে পারেন। আগে সবজি(Vegetable) পিউরি করে দিয়ে থাকলে এখন সেদ্ধ করে বা হালকা মসলায় রান্না করে তাকে কামড়ে খাওয়ার মতন টুকরা করে দিন। ডিম এখন পুরোটাই দিতে পারেন। বাচ্চার খাওয়ার রুচির উপরে নির্ভর করে পানিতে বা তেলে পোঁচ করে বা সিদ্ধ করে ডিম দিতে পারেন। সেই সাথে অল্প করে ডাল-ভাত, রুটি, দই, ক্ষীর ইত্যাদি দিতে পারেন। এসবই শিশুর জন্য খুবই উপকারী এবং পুষ্টিকর৷ মাছ মাংস অবশ্যই দিন।
দিনে কতটুকু দিতে হবেঃ
স্নেহ জাতীয় পদার্থ দিতে পারেন ১/৩ কাপ। এক বারে সবটা দিতে হবে তা নয়। বিভিন্ন খাবারে মিশিয়ে দিতে পারেন। আবার দইটা সরাসরি খাওয়াতে পারেন। আয়রন যুক্ত খাবার দিতে পারেন ১/৩ থেকে ১/২ কাপ। বিভিন্ন ফল ফলাদি দিতে হবে ১/৪ থেকে ১/২ কাপ মত। আর সবজি ১/৪ থেকে ১/২ কাপ দিলেই চলবে। প্রোটিন যুক্ত খাবার(Protein-related foods) দিন ১/৬ থেকে ১/৩ কাপ মত। এ সময় শিশুকে দিনে ৪-৫ বার খাওয়ানো দরকার৷ আপনি চাইলে তার খাবারের একটা রুটিন করে নিতে পারেন। তবে আপনার সন্তান সব খাবার নিয়ম করে খেতে পারবে এমন কোন কথা নেই, তাই জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। এতে তার খাবারের প্রতি ভীতি তৈরি হবে। খাওয়ানোর সময় চাইলে তাকে গল্প বলতে পারেন। মৌসুমি ফল ও সবজি নিয়মিত তার খাবারে যোগ করতে ভুলবেন না। খিচুড়ির পরিবর্তে যদি ভাত-ডাল, মাছ, মাংস, সবজি এক সাথে মাখিয়ে খাওয়াতে চান তবে সেটাও করতে পারেন। কোন খাবারে এলার্জি(Allergie) থাকলে তা পরিহার করুন আর নতুন কোন খাবারে এলার্জি হয় কি না তা লক্ষ্য রাখুন। নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখবেন।