আজকাল সৌন্দর্য্য চর্চায় ভিটামিন ই এর ব্যবহার বেশ বেড়েছে। আর এ ভিটামিনের গুনাগুন অনেক।
ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম। এটি আটটি যৌগের এমন এক সমন্বয় সৃষ্টি করে যার মধ্যে টোকোফেরল ও টোকোট্রিইনল উভয়ই থাকে।
ভিটামিন ই রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদপিন্ড সুস্থ রাখে, মস্তিষ্কের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং নির্দিষ্ট ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে।
ত্বক ও চুলের যত্নে ভিটামিন ই অনেক কার্যকরী এক উপাদান। জলপাই তেল, নারিকেল তেল, বাদাম, সূর্য্যমুখী বীজ, গম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে।তাছাড়া বাজার থেকে খাঁটি ভিটামিন ই তেল ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল (vitamin e capsule) কিনে নিতে পারেন। তবে আসুন জেনে নেই ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় ভিটামিন ই এর ৮টি উপকারিতা –
১। চুলের বৃদ্ধিতে ভিটামিন ই
ভিটামিন ই তে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চুলের ক্ষতিগ্রস্ত ফলিকসকে সারিয়ে তোলে এবং টিস্যু ক্ষয় হওয়া প্রতিরোধ করে। ফলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
তাছাড়া ভিটামিন ই চুলকে গোড়া থেকে শক্ত ও মজবুত করে এবং আপনার চুলকে অকালে পেকে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।চুলের বৃদ্ধিতে ভিটামিন ই
২ টেবিল চামচ উষ্ণ জলপাই বা নারিকেল তেলের সাথে ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল (vitamin e capsule) মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি আঙুলের সাহায্যে বৃত্তাকার গতিতে মাথার স্কাল্পে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর স্বাভাবিক পদ্ধতিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২/৩ বার এ ট্রিটমেন্ট করতে পারেন।
নারিকেল দুধ (ভিটামিন ই সমৃদ্ধ) দিয়েও মাথার স্কাল্প ম্যাসাজ করতে পারেন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে চুল হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে কয়েকবার এ ট্রিটমেন্ট করতে পারেন।
এছাড়াও আপনার চুলে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগাতে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার বেছে নিন।
২। ত্বকের দাগ কমাতে ভিটামিন ই
ত্বকের দাগ কমাতে ভিটামিন ইভিটামিন ই এর আরেকটি উপকারিতা হলো এটি ত্বকের দাগ কমাতে সাহায্য করে। এন্টিঅক্সিডেন্ট হওয়ায় এটি ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের নিরাময় ত্বরান্বিত করে এবং যেকোন ধরণের দাগ বা ক্ষত স্থায়ী হওয়া প্রতিরোধ করে। এর ময়শ্চারাইজিং উপাদান ত্বকের আদ্রতা রক্ষা করতে সক্ষম।ভিটামিন ই ক্যাপসুল (vitamin e capsule) থেকে প্রাপ্ত তেল ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকে ব্যবহার করুন।
৫-১০ মিনিট আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন।
৩০ মিনিট রেখে উষ্ণ পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে নিন।
দাগ না কমা পর্যন্ত প্রতিদিন দুইবার এ পদ্ধতিতে ভিটামিন ই ব্যবহার করুন।
৩। ত্বকের বলিরেখা দূর করতে ভিটামিন ই
ত্বকের বলিরেখা ও অন্যান্য বয়সজনিত দাগ দূর করতে ভিটামিন ই বেশ কার্যকর। এটি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে যা আমাদের ত্বকে স্থিতিস্থাপকতা যোগ করে। ফলে বলিরেখার মতো বয়সের চিহ্ন ত্বক থেকে দূর হয়।
প্রতিদিন রাতে আক্রান্ত ত্বকে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের (vitamin e capsule) তেল ব্যবহার করুন। সারারাত রেখে সকালে উষ্ণ পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে নিন।
বয়সের লক্ষণ দূর করতে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ কার্যকর ও সহজ একটি উপায়।
৪। রোদে পোড়া দাগ কমাতে ভিটামিন ই
ত্বকের অসম রঙ ও রোদে পোড়া দাগ দূর করতে ব্যবহার করুন ভিটামিন ই। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির জন্য আমাদের ত্বকের যে ক্ষতি হয় তা ভিটামিন ই ব্যবহারে খুব সহজে সারিয়ে নেয়া সম্ভব।
১ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েলের সাথে ১/২ টি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের (vitamin e capsule) নির্যাস মিশিয়ে নিন। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মিশ্রণটি মেখে নিন। সারারাত রেখে সকালে ভালোভাবে ত্বক ধুয়ে নিন। টানা একমাস প্রতিদিন এ ট্রিটমেন্ট চালিয়ে যান, দেখবেন ত্বকের সমস্যায় খুব ভালো ফলাফল পাবেন!
৫। হাত মসৃন করতে ভিটামিন ই
প্রতিদিনের কাজে আমাদের হাতের উপর কম ধকল যায়না। তাই হাতের একটু বাড়তি যত্ন নিতেই হয়! আর এ যত্নে ভিটামিন ই অনেক উপকারী। ভিটামিন ই রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকে আদ্রতা আনে।
আপনার বডি লোশনের সাথে সামান্য ভিটামিন ই তেল মিশিয়ে নিন। এটি ব্যবহারে হাত মসৃন ও কোমল হবে।
একটি পাত্রে উষ্ণ পানিতে ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের (vitamin e capsule) তেল, একটি লেবুর রস ও সামান্য মধু মিশিয়ে নিন। এবার পানিতে ১০-১৫ মিনিট হাত ডুবিয়ে রাখুন। পরে হাত ভালভাবের শুকিয়ে যেকোন ময়শ্চারাইজিং ক্রিম লাগিয়ে নিন।
৬। শুষ্ক ঠোঁটের যত্নে ভিটামিন ই
শুষ্ক ও ফেঁটে যাওয়া ঠোঁটের নিরাময়ে ভিটামিন ই খুব উপকারী। ভিটামিন ই ঠোঁটের ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ঠোঁটকে মসৃন ও নরম করে তোলে। তাছাড়া ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করতে এর জুড়ি নেই।
শুষ্ক ঠোঁটে নিয়মিত ভিটামিন ই তেল প্রয়োগ করুন।
এছাড়া এক চা চামচ মধুর সাথে কয়েক ফোটা ভিটামিন ই তেল মিশিয়ে প্রতিদিন ২/৩ বার ব্যবহার করুন।
৭। নখের পরিচর্যায় ভিটামিন ই
নখ দৃঢ় ও দীর্ঘ করতে ভিটামিন ই সেরা। এর ময়শ্চরাইজিং উপাদান নখকে শক্তিশালী করে, নখের শুষ্কতা দূর করে। তাছাড়া এটি নখের ভেঙে যাওয়া রোধ করে।
গরম পানিতে ১/২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল (vitamin e capsule) মিশিয়ে ১০ মিনিট হাত ডুবিয়ে রাখুন। সপ্তাহে ৩/৪ বার তা করতে পারেন।
অথবা নখে সরাসরি ভিটামিন ই তেল লাগিয়ে ৫মিনিট ম্যাসাজ করুন।
৮। চুলের আগা ফাটা রোধে ভিটামিন ই
চুলে ঘন ঘন রঙ দেয়া, হেয়ার ড্রয়ারের অতিরিক্ত ব্যবহার বা অযত্ন- অবহেলায় চুলের আগা ফাটা শুরু হয়। এ সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করতে পারেন ভিটামিন ই। এটি চুলে চমৎকার কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে, চুলে পুষ্টি যোগায়। ফলে আগা ফাটা হ্রাস পায়।
অলিভ অয়েল, ভিটামিন ই ও নারিকেল তেল সমপরিমাণে মিশিয়ে চুলের আগায় ব্যবহার করুন। ২/৩ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৩/৪ বার এভাবে চুলের যত্ন নিন। দেখবেন কিছুদিনের মাঝেই চুলে চমৎকার পরিবর্তন আসবে !